ঢাকারবিবার , ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮
আজকের সর্বশেষ সবখবর

পর্যটকের ঢলে মুখরিত কক্সবাজার

প্রতিবেদক
সিএনএ

ডিসেম্বর ১৬, ২০১৮ ৫:৪৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

জসিম সিদ্দিকী কক্সবাজার:টানা ৩ দিনের ছুটিতে দেশের পর্যটন রাজধানী খ্যাত কক্সবাজারে এখন পর্যটকদের উপচে পড়া ভীড়। এর ফলে কক্সবাজার শহর, সমুদ্র সৈকত, বিপনী কেন্দ্র, রাস্তাঘাটসহ জেলার অন্যান্য পর্যটন স্পটসমূহ দারুণ প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠেছে। রাস্তাঘাটে দেখা দিচ্ছে মারাত্মক ট্রাফিক জ্যাম। পর্যটকদের ভীড়ে শহর ও সাগরপাড়ের চার শতাধিক আবাসিক হোটেল, গেস্ট হাউস, কটেজ ও সরকারী রেস্ট হাউসের সকল কক্ষ আগাম বুকিং হয়ে গেছে।
পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, টানা ৩দিনের ছুটি পড়ায় গত বৃহস্পতিবার থেকে দেশের জনপ্রিয় অবকাশ যাপন কেন্দ্র কক্সবাজারে লাখো পর্যটক ভীড় করছে। গতকাল বিকালে শহরের কলাতলী থেকে ডায়াবেটিক পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার সৈকতে মানুষ আর মানুষ। নারী-পুরুষ-তরুণ-তরুণী ও শিশুসহ আবাল বৃদ্ধ-বনিতার ভীড়ে সৈকতে বসে লাখো মানুষের মিলন মেলা। এদের মধ্যে কেউ কেউ সৈকতে হাঁটছেন, কেউ বা চেয়ারে বসে গল্পগুজব করছেন, আবার কেউ কেউ সাগরে গোসলে মত্ত। অনেকেই বীচ বাইক ও ওয়াটার বাইকে চড়ে বীচ স্পোর্টস উপভোগ করছেন।
রবি লাইফ গার্ড কর্মী ছৈয়দ নূর জানান, সাধারণত ঈদের পরদিন থেকে এক সপ্তাহ পর্যন্ত কক্সবাজারে পর্যটকদের বেশ ভীড় থাকে। এসময় হোটেল-মোটেলে কক্ষ সংকট দেখা দেয়। কিন্তু সাপ্তাহিক ছুটি হিসেবে টানা ৩দিনে রেকর্ড সংখ্যক পর্যটক এসেছেন কক্সবাজারে।
কক্সবাজার সৈকতের কিটকট (চেয়ারছাতা) ব্যবসায়ী আবুল হাশেম জানান, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার বারে পর্যটক ও স্থানীয়সহ প্রায় দেড় লাখ মানুষ কক্সবাজার সৈকতে বেড়াতে এসেছেন এবং এখনো পর্যটকের ভীড় সৈকতে।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব ওমর সোলতান কোম্পানী জানান, শহরের আবাসিক হোটেল, গেস্ট হাউস, কটেজ ও সরকারী রেস্ট হাউসে প্রায় ১ লাখ ৫ হাজার মানুষের রাত যাপনের সুবিধা রয়েছে। কিন্তু বৃহস্পতিবার থেকে কক্সবাজারে পর্যটকদের ভীড়ে শনিবার পর্যন্ত শহরের সকল আবাসিক হোটেল-মোটেল ও রেস্ট হাউস আগাম বুকিং হয়ে গেছে। কেউ আগাম বুকিং বাতিল না করলে রবিবারের আগে নতুন কোন অতিথিকে কক্সবাজারে ঠাঁই দেয়া সম্ভব নয়।
এদিকে এ মিলন মেলায় যোগ দিতে এসে অনেক পুরনো বন্ধুর সাথে দীর্ঘদিন পর দেখা-সাক্ষাত হয়েছে। আর একারণেই কক্সবাজার ভ্রমণ তাদের কাছে হয়ে ওঠেছে আরো আনন্দময়।
ঢাকা হতে আসা হায়দার জানান, কক্সবাজারে বেড়াতে এসে প্রায় ১০ বছর এক বন্ধুর দেখা পেয়েছি। অথচ এতদিন তার সাথে কোন যোগাযোগ ছিল না। কক্সবাজারই দুইজনকে আবার মিলিত করে দিয়েছে। এজন্য তিনি কক্সবাজারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
একই কথা জানান ফরিদপুরের মামুনর রশিদ। তিনি জানান, এ কারণে তার এবারের কক্সবাজার ভ্রমণ সারাজীবন মনে থাকবে।
অন্যদিকে কক্সবাজারে পর্যটকদের এই ভীড়কে পুঁজি করে গলাকাটা ব্যবসা ফেদেছে একশ্রেণীর হোটেল মালিক ও কক্ষ দালাল। তারা আসল ভাড়ার ৩/৪ গুণ হারে ভাড়া নিচ্ছে বলে অভিযোগ পর্যটকদের।
ঢাকা থেকে বুকিং না করে আসা পর্যটক দম্পতি নুরে জান্নাত জেবা ও রায়হান শফি জানান, টানা ৩দিনের ছুটি পড়ায় এবং সে সাথে জ্যোৎ¯œা রাত হওয়ায় সপরিবারে কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন তিনদিনের জন্য। রবিবার রাতে আবারও ফিরে যাবেন ঢাকায়। চট্টগ্রাম থেকে বেড়াতে আসা দম্পতি নুরজাহান খান ও আকবর খান কক্সবাজারে হোটেল না পেয়ে রাতেই ফিরে যাবেন বলে জানান।
কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন (টোয়াক) বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি এসএম কিবরিয়া খান জানান, গত বৃহস্পতিবার কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ছাড়াও সেন্টমার্টিন, হিমছড়ি, দরিয়ানগর, ইনানী, সাফারী পার্ক, মেদাকচ্ছপিয়া ন্যাশনাল পার্ক ও মহেশখালীর আদিনাথে ছিল পর্যটকদের ঢল।
পর্যটকদের এমন ভীড়ের সুযোগে কোন দূর্বৃত্ত যাতে অঘটন ঘটাতে না পারে তার জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশও সতর্ক রয়েছে বলে জানান কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন। তিনি জানান, পর্যটকদের চাপ থাকায় তাদের নিরাপত্তা বিধানে পর্যটন স্পটসমূহে অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া কক্সবাজার সৈকতে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খুলে পর্যটকদের রাতদিন ২৪ ঘন্টা নিরাপত্তা বিধান করছে পুলিশ।
জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন জানান, ভোর থেকেই পর্যটকদের ভ্রমন নিরাপদ ও আনন্দময় করতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম (জয়) এবং নাসরিন বেগম সেতুর নেতৃত্বে সমুদ্র সৈকত এবং হোটেল-মোটেল জোন এলাকায় চলছে মোবাইল কোর্ট। সাথে আছে জেলা প্রশাসনের বীচ কর্মীসহ ৩৯ আনসার ব্যাটেলিয়ন।

সম্পর্কিত পোস্ট