ঈদের পরদিন বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) বিয়ে করেছেন মো. রাসেল ও সোনিয়া আক্তার। কিন্তু করোনা রোধে শুক্রবার (২৩ জুলাই) থেকে সরকার আরোপিত কঠোর লকডাউন শুরু হওয়ায় বিয়ের রাতে কর্মস্থলে ফিরতে নববধূকে নিয়ে লঞ্চের ডেকে বসেই ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন বরিশালের উজিরপুর উপজেলার ওটরা ইউনিয়নের বাসিন্দা রাসেল। এতে করে বর-কনের সাজে তাদের বিয়ের রাত কেটেছে লঞ্চের ডেকে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতেই পারাবত-১০ লঞ্চের চতুর্থতলায় লঞ্চ মাস্টারের সামনের খোলা জায়গায় চাদর বিছিয়ে সেখানেই সারারাত কাটিয়ে দেন এ নবদম্পতি। রোজার ঈদের সময় রাসেল ও সোনিয়ার দেখাদেখি শেষে বিয়ের পাকা কথা হয়। বিয়ের তারিখ নির্ধারণ করা হয় ঈদুল আজহার পরদিন। সিদ্ধান্ত ছিল, করোনার কারণে হাতেগোনা কয়েকজনের উপস্থিতিতে বিয়ে হবে। আর লকডাউনের কারণে আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে নবদম্পতি চলে যাবে ঢাকায়।
ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা রাসেল বলেন, ‘বসের সাফ কথা, কর্মস্থলে উপস্থিত থাকতে হবে। এ কারণে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে কোনোভাবে খাবার খেয়ে ঢাকায় যেতে বরিশাল নৌবন্দরে চলে আসি। কারণ মারাত্মক ভিড় হবে তাই আগেভাগেই আন্দাজ করেছি। বিকেলের মধ্যে বরিশাল নৌবন্দরে পৌঁছে পারাবত-১০ লঞ্চে উঠি। এর পূর্বে ঘাটে থাকা প্রতিটি লঞ্চে কেবিনের খোঁজ নিয়েছি। এমনকি স্টাফ কেবিনও খুঁজেছি। কিন্তু কোনও কিছুই ছিল না। ডেক থেকে শুরু করে ছাদেও যাত্রী ছিল। কোনোভাবে জায়গা ব্যবস্থা করতে না পেরে পারাবত লঞ্চের সারেংয়ের সামনে চাদর বিছিয়ে জায়গা করে নেই।’
রাসেল বলেন, ‘স্ত্রী বিয়ের কাপড়ে থাকায় বেশিরভাগ যাত্রীর দৃষ্টি ছিল আমাদের দিকে। বিয়ে করেই লঞ্চে ওঠার বিষয়টি সবাই বুঝতে পারে। এ নিয়ে একাধিক প্রশ্নের সম্মুখীনও হতে হয়েছে আমাকে। অনেকে আবার আস্তে আস্তে বলছিল, লকডাউনের মধ্যে বিয়ে। বিষয়গুলোর আমার কানে এলেও চুপচাপ থাকি।’
শুক্রবার ভোরবেলা সদরঘাট পৌঁছান তারা। হাসি দিয়ে সুমন বললেন, ‘বিয়ের রাতের ভিন্ন এক অভিজ্ঞতা হলো আমাদের দুইজনের।’
পারাবত-১০ লঞ্চের সুপারভাইজার মোখলেচুর রহমান বলেন, ‘আমারও তাদের কেবিন দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু এত যাত্রীর চাপ, এর মধ্যে কোনোভাবেই কেবিনের ব্যবস্থা করা যায়নি।’