ঢাকাশুক্রবার , ২৫ জুন ২০২১
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ঢাকায় ৪ দিনে ১০৭ শতাংশ করোনা বড়েছে

প্রতিবেদক
সিএনএ

জুন ২৫, ২০২১ ২:০০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৪ জুন থেকে ২০ জুন সাত দিনে ঢাকা বিভাগে শনাক্ত বেড়েছে ১১৪ শতাংশ। এই তুলনা করা হয়েছে তার আগের সাত দিনের সঙ্গে। এরপর ঢাকায় শনাক্ত হওয়া করোনা আক্রান্তের সংখ্যা চার দিনেই (২১ জুন-২৪ জুন) ১০৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো তথ্য বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানা যায়। এ ৪ দিনে ঢাকা বিভাগে শনাক্ত হয়েছেন ৮ হাজার ৭৭০ জন। তার আগের সাত দিনে মোট শনাক্ত ছিল ৮ হাজার ২১৫ জন। ঢাকা শহরেই এখন সংক্রমণের হার প্রায় ১৩ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, গত চার দিনে ঢাকা বিভাগে শনাক্তের হার সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী ঢাকা শহরে। এখানে ২১ জুন শনাক্ত হন এক হাজার ২৯৪ জন, ২২ জুন শনাক্ত হন এক হাজার ৪৯৬ জন, ২৩ জুন শনাক্ত হন ২ হাজার ৬৪ জন এবং ২৪ জুন শনাক্ত হন এক হাজার ৫৭২ জন। অর্থাৎ আগের সাত দিনের তুলনায় চার দিনেই ৫৫৫ জন শনাক্ত বেশি হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ঢাকায় এবং কম হারে শনাক্ত হয়েছে রাজশাহী বিভাগে। ঢাকার পর উচ্চ হারে শনাক্ত রংপুর বিভাগে। এরপর আছে ময়মনসিংহ, বরিশাল, খুলনা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও রাজশাহী বিভাগ। তাছাড়া ওই সাত দিনে মৃত্যু হয়েছে ৪৩০ জনের। আর পরের চার দিনে মৃত্যু হয়েছে ৩২০ জনের। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে খুলনায়। ঢাকায় মারা গেছেন ৬৯ জন এবং খুলনায় ১০০ জন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বাংলাদেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৪০টি জেলা অতি উচ্চ ঝুঁকিতে আছে। এর মধ্যে ১৫টি জেলা রয়েছে উচ্চ ঝুঁকিতে। ৮টি জেলা রয়েছে মধ্যম ঝুঁকিতে। সংস্থাটি সংক্রমণে বাংলাদেশকে তিন ভাগে ভাগ করেছে। অতি উচ্চ ঝুঁকি, উচ্চ ঝুঁকি ও মধ্যম ঝুঁকি। বান্দরবানে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা কম হওয়ায় এই জেলাকে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। রিপোর্ট অনুযায়ী, খুলনা বিভাগের ১০টি জেলার সবকটিই উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। ঢাকা বিভাগের পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক। এ বিভাগে সংক্রমণ বেড়েছে ১১৪ দশমিক ৪ শতাংশ।

দেশে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি চলছে। ভারতীয় তথা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সামাজিক সংক্রমণ হয়েছে। এ অবস্থায় সারাদেশে কমপক্ষে ১৪ দিনের ‘শাটডাউন’ জারির সুপারিশ করেছে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরার্মশক কমিটি।

এদিকে কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ রোধে করোনা সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির শাটডাউনের সুপারিশ যৌক্তিক বলে মনে করেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তিনি জানিয়েছেন, যেকোনও সময় শাটডাউনের ঘোষণা দেওয়া হতে পারে।

দেশে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে মে’র শেষ দিকে। জুনে ধীরে ধীরে সংক্রমণ বাড়লেও মাঝামাঝি সময়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে শনাক্ত। বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৬ হাজার ৫৮ জন। ৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঢাকা বিভাগের আশেপাশের জেলাগুলোর মধ্যে গোপালগঞ্জ, রাজবাড়ী, টাঙ্গাইল, ফরিদপুরে সংক্রমণের হার বেশি।

ঢাকাকে সুরক্ষিত রাখতে আশেপাশের সাত জেলায় লকডাউন ঘোষণা করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও ছোট যান কিংবা পায়ে হেঁটেই রাজধানীতে ঢুকছে—বের হচ্ছে মানুষ। পণ্যবাহী পরিবহন ছাড়াও মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল চলাচল করতে দেখা গেছে। চেকপোস্টে গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। বেশিরভাগই অফিস, চিকিৎসা ও স্বজনের মৃত্যুর কথা বলছেন। পুলিশ তাদের বাধা দিচ্ছে না। তবে চেকপোস্টের পাশ দিয়ে অসংখ্য মানুষকে হেঁটে ঢাকায় ঢুকতে এবং বের হতে দেখা গেছে।

এর আগে স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, ঢাকার চারপাশের যেসব এলাকা থেকে ঢাকামুখী রোগী আসার কথা ছিল, সেসব স্থান বন্ধ করা গেলে ঢাকার ভেতর লকডাউন দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। কিন্তু যদি ঢাকার চারপাশের এলাকা থেকে মানুষকে ঠেকিয়ে রাখতে না পারি, তবে ঢাকার পরিস্থিতি নাজুক হবে।

কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম মনে করেন, সামনের দিনগুলোতে আরও বিপর্যয় আসছে। তার মতে, সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ মানা হচ্ছে না। সরকার এসব মানাতে পারবে বলেও মনে হচ্ছে না। সামনের দিনগুলোতে ঝুঁকি বাড়বে। জুন মাসতো শেষ হয়ে গেছে প্রায়। জুলাই-আগস্ট নাগাদ এরকম বাড়তে থাকবে। তারপর হয়তো কমতে থাকবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সম্পর্কিত পোস্ট