ঢাকামঙ্গলবার , ২৯ জুন ২০২১
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ঢাকায় ১ দিনে সনাক্ত তিন গুন

প্রতিবেদক
সিএনএ

জুন ২৯, ২০২১ ৯:২৮ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

করোনা শনাক্তে দেশের প্রতিটি জেলায় এখন টালমাটাল পরিস্থিতি। শুধুমাত্র ঢাকাতেই ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে শনাক্ত বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা বিভাগের প্রতিটি জেলায় করোনা পরিস্থিতি পাল্টে গেছে দুই দিনের মাথায়। এই জেলাগুলোতে বেড়েছে শনাক্তের হার। নতুন করে সংক্রমণ বেড়েছে রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট এবং বরিশাল বিভাগে। শনাক্ত বিবেচনায় রংপুর এবং খুলনার অবস্থান কাছাকাছি। আর জার্মানির গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডেটার (জিআইএসএআইডি) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৪০ জনের শরীরে ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে অর্ধেকই ঢাকার।

৮ বিভাগের সংক্রমণ পরিস্থিতি

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা বিভাগে করোনা শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ, ময়মনসিংহ বিভাগে ২০ দশমিক ৩২ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে ২২ দশমিক ৪৮ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে ২০ দশমিক ৬০ শতাংশ, রংপুর বিভাগে ৪২ দশমিক ২০ শতাংশ, খুলনা বিভাগে ৪৬ দশমিক ২৮ শতাংশ, বরিশালে ৩৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং সিলেট বিভাগে ৩০ দশমিক ৭৪ শতাংশ। এর মধ্যে রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট এবং বরিশাল বিভাগে নতুন করে শনাক্তের হার বেড়েছে।

৩৫ জেলায় ৩০ শতাংশের ওপরে শনাক্তের হার

দেশের ৩৫টি জেলায় করোনা শনাক্তের হার ৩০ শতাংশের ওপরে। এর মধ্যে ৮টি জেলায় শনাক্তের হার ৫০ শতাংশের ওপরে। এই ৮ জেলা হচ্ছে— মৌলভীবাজার (৬৩ দশমিক ৫১), পিরোজপুর ( ৭০ দশমিক ৭৬), মাগুরা (৯৫ দশমিক ৬৫), ঝিনাইদহ (৬৮ দশমিক ৭৫), যশোর (৫৬ দশমিক ৭৫), ঠাকুরগাঁও (৫৭ দশমিক ২১) , পঞ্চগড় (৫৫ দশমিক ৩৫) এবং মুন্সীগঞ্জ (৬৬ দশমিক ৬৬)। আর ৩০ শতাংশের ওপরে থাকা ২৭টি জেলা হচ্ছে– ফরিদপুর, গাজীপুর, গোপালগঞ্জ, রাজবাড়ী, টাঙ্গাইল, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, চাঁদপুর, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, বাগেরহাট, চুয়াডাঙ্গা, খুলনা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, নড়াইল, বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, বরগুনা, ঝালকাঠি, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ।

ঢাকায় তিন গুণ রোগী

ঢাকা বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার, ২৮ জুন) শনাক্ত হয়েছে ৩ হাজার ৯৯৮ জন। এর মধ্যে ৩ হাজার ১৬৫ জনই ঢাকা জেলার। আগের দিন রবিবার (২৭ জুন) ঢাকা জেলায় শনাক্ত ছিল ১ হাজার ৮১ জন। আর ঢাকা জেলা ব্যতীত পুরো বিভাগে শনাক্ত ছিল ১ হাজার ৬৪৮ জন। ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি শনাক্তের হার মুন্সীগঞ্জ, গোপালগঞ্জ এবং টাঙ্গাইলে। তবে এ বিভাগের প্রতিটি জেলাতেই শনাক্তের হার ১৫ শতাংশের ওপরে। ঢাকায় শনাক্তের হার ১৮ শতাংশ।

চট্টগ্রামে একদিনের ব্যবধানে দেড়গুণ রোগী বেড়েছে

চট্টগ্রাম বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছে ৮১১ জন। এর মধ্যে ৩২৭ জনই চট্টগ্রাম জেলার। এরপর আছে কুমিল্লায় ১০৪ জন। শনাক্তের দিক দিয়ে কুমিল্লার কাছকাছি আছে নোয়াখালী। চট্টগ্রাম বিভাগে আগের দিন রবিবার (২৭ জুন) শনাক্ত ছিল ৪৮৯ জন।

সিলেটে একদিনের ব্যবধানে বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি

সিলেট বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছে ২৩৪ জন। আগের দিন এই বিভাগে শনাক্ত ছিল ৯৯ জন। সিলেট বিভাগের সবচেয়ে বেশি শনাক্তের হার মৌলভীবাজারে। এরপর আছে হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ এবং সিলেট।

ঢাকায় ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট

দেশে ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট বি ১৬১৭-এর সামাজিক সংক্রমণের কথা আগেই জানিয়েছিল রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। গত ৩ জুন প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন পর্যায়ে জিনোম সিকোয়েন্স করে জানায়, সারাদেশে ৫০টি নমুনার মধ্যে ৪০টিতে ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে, যা শতকরা হিসাবে ৮০ শতাংশ। তখন ঢাকায় ২টি নমুনায় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে বলে জানায় প্রতিষ্ঠানটি।

জার্মানির গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডেটার (জিআইএসএআইডি) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ৪০ জনের নমুনায় ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের গত ২৬ জুন আপলোড করা জিনোম সিকোয়েন্সের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, তাদের প্রাপ্ত ৬টি ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের মধ্যে ৫টি ঢাকা বিভাগে এবং একটি কুষ্টিয়ায়। ঢাকা বিভাগের মধ্যে আছে ঢাকা, টাঙ্গাইল এবং কিশোরগঞ্জ।

২১ জুনে আপলোড করা আইসিডিডিআরবি’র জিনোম সিকোয়েন্সের তথ্য বলছে, তারা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট পেয়েছে ৩৪টি নমুনায়। এর মধ্যে ১৬টি নমুনা ঢাকার। ঢাকার মোহাম্মদপুর, আজিমপুর, মাদারটেক, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, মধুবাগ ও মহাখালী এলাকার পাশাপাশি রাজবাড়ি এবং শরীয়তপুর আছে এই তালিকায়। তাছাড়া খুলনা, যশোর এবং রাজশাহী আছে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া জেলার মধ্যে। এ পর্যন্ত ঢাকায় পাওয়া ৩৭টি ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের তথ্য সেখানে জমা আছে। আর সারাদেশের আছে ৯৫টি ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের তথ্য।

স্বাস্থ্য অধিদফতর এপ্রিলের করোনা পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি ঘটার আশঙ্কা করছে। গত ৭ এপ্রিল করোনা শনাক্ত অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দাঁড়ায় ৭ হাজার ৬২৬ জন। আর সোমবার (২৮ জুন) অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে করোনা শনাক্ত দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৩৬৪ জন। রবিবার (২৭ জুন) অতীতের মৃত্যুর রেকর্ড ভেঙে একদিনে সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১৯ জন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইন ডিরেক্টর ডা. রোবেদ আমিন জানান, আমরা যদি সংক্রমণের হার ২১ –২২ শতাংশ এভাবেই গুণতে থাকি, তাহলে অচিরেই যেসব বেড খালি আছে, তা আর দেখতে পারবো না। আইসিইউ বেডের সংখ্যাও যা খালি আছে, সেগুলো ভরে যেতেও হয়তো বেশি সময় লাগবে না। আমাদের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে অনেক বেশি সংক্রমণ পেয়েছি। সীমান্তবর্তী প্রায় সব জেলায় যেখানে সংক্রমণ বেশি, সেখানে মৃত্যুও হচ্ছে বেশি। সবজায়গায় মৃত্যুর পরিমাণ অনেক বেশি দেখছি।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘করোনা আমাদের নিয়ন্ত্রণে আনতেই হবে। এই ভাইরাসে যদি লাখ লাখ লোক আক্রান্ত হয়, তাহলে তো কষ্ট হবেই। সেজন্যই লকডাউন দিয়ে করোনা নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।’

পুরো দেশজুড়ে যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ ও লকডাউনে সংক্রমণের গতি কমবে বলে মনে করেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর উপদেষ্টা ও মহামারি বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শনাক্তের হারে আমরা কখনও শূন্যে নামতে পারিনি।’

লকডাউন যথেষ্ট নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সংক্রমণের উৎস কমাতে হবে। রোগী ম্যানেজমেন্টও জরুরি। রোগীদের শনাক্ত করে তাদের আইসোলেশন ও সংস্পর্শে আসাদের কোয়ারেন্টিনে নেওয়া খুব দরকার। টিকা আসলে টিকা নিতেই হবে সবাইকে। এরপরও মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। টিকায় মৃত্যু কমলেও সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে যায়।’

কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম মনে করেন, সামনের দিনগুলোতে আরও বিপর্যয় আসছে।

সম্পর্কিত পোস্ট