ঢাকাশনিবার , ১০ জুলাই ২০২১
আজকের সর্বশেষ সবখবর

জুয়া খেলার ভিডিও অনলাইনে প্রচার করেন ছেলে, বাবাকে তুলে নিয়ে নির্যাতন

প্রতিবেদক
সিএনএ

জুলাই ১০, ২০২১ ১:১৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

কক্সবাজার সদরের ইসলামপুরে দিনদুপুরে চলা জুয়ার আসরের একটি ভিডিও প্রশাসনকে সরবরাহ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাড়েন এলাকার প্রতিবাদী তরুণ হিসেবে পরিচিত প্রকৌশলী মো. শাহেদুল ইসলাম। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে তার বাবা ফরিদুল আলমকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে জুয়ার আসরে থাকা চিহ্নিতদের বিরুদ্ধে।

শুক্রবার (৯ জুলাই) বিকেলে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করে তাকে পাহাড়ের ভেতরের একটি বাড়ি থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ঘটনায় চারজনের নাম দিয়ে ১০-১৫ জনকে অজ্ঞাতনামা দেখিয়ে ঈদগাঁও থানায় এজাহার দিয়েছেন মারধরের শিকার বৃদ্ধ ফরিদুল আলম। তিনি কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন, কামাল হোসেন (৩৮), মো. শরিফ (৪৫), এরশাদ (৩০) ও রমজানসহ (৩৮) অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১৫ জন।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম এজাহার পাওয়া ও ভিকটিমকে পুলিশ কর্তৃক উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

দায়েরকৃত এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ফরিদুল আলম এলাকার সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান এবং সমাজসেবক। কিন্তু অভিযুক্তরা এলাকার খারাপ প্রকৃতির হিসেবে পরিচিত। ২ নম্বর অভিযুক্ত শরীফের প্রত্যক্ষ প্ররোচনা ও নেতৃত্বে অন্য অভিযুক্তরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দীর্ঘদিন এলাকায় মাদক ব্যবসা, পাহাড় কাটা, জুয়ার আসর বসানোসহ নানা অপরাধ সংঘটন করে আসছে। কিন্তু অপরাধীরা সবাই একীভূত এবং শরীফের ভাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান হওয়ায় তাদের অপরাধের বিষয়ে জানলেও কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পান না। কিন্তু তার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার মো. শাহেদুল ইসলাম তাদের কৃত অপরাধের বস্তুনিষ্ঠ প্রমাণসহ তথ্যাদি প্রশাসন ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে সরবরাহ এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করে আসছিল।

মঙ্গলবারও (৬ জুলাই) অভিযুক্তরা এলাকায় প্রকাশ্যে জুয়ার আসর বসান। সেটি কে বা কারা ভিডিও ধারণ করে। ভিডিওর কপি আমার ছেলের হাতে গেলে প্রশাসনকে সরবরাহ করে এলাকার নৈতিক অবক্ষয়ের বিষয় তুলে ধরে তার ফেসবুকে প্রচার করে।

জুয়া খেলার ভিডিও প্রচারের পর অভিযুক্তরা ফরিদুলের পরিবারের ওপর চরমভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) সকালে ফরিদুল নতুন অফিস বাজারে গিয়ে ধলা মিয়ার চায়ের দোকানে বসে চা পান করছিলেন। দুপুর সাড়ে ১২টার সময় অভিযুক্তরা অবৈধ অস্ত্রশস্ত্রে তাকে ইজিবাইকে (টমটম) তুলে প্রথমে বটতলী শরিফ ট্রাসপোর্ট অফিসে নিয়ে যায়। সেখানে শরিফের নির্দেশে অন্য অভিযুক্তরা তাকে মারধর করেন। আধাঘণ্টা পর তার চোখে কাপড় বেঁধে পুনরায় গাড়িতে করে নিয়ে যায়।

গহীন পাহাড়ের একটি বাড়িতে নিয়ে ফরিদুলকে আবারও মারধর করা হয়। একপর্যায়ে অভিযুক্তরা ৩০-৩৫ বছরের অজ্ঞাত এক নারীর সঙ্গে তার আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ধারণ করে। তারা ১০০ টাকা মূল্যের তিনটি নন জুডিশিয়াল খালিস্ট্যাম্পে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেয়।

তার ছেলে শাহেদ জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করলে বিকেল ৩টার দিকে ঈদগাঁও থানার একদল পুলিশ এসে ফরিদুলকে উদ্ধার করে।

ফরিদুলের ছেলে ইঞ্জিনিয়ার মো. শাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার মা সংরক্ষিত আসনের মেম্বার ছিলেন দীর্ঘদিন। এলাকার অপরাধ ও অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত লড়েছেন তিনি। তা দেখেই আমার শিশু বেলা কেটেছে। বড় হবার সঙ্গে সঙ্গে মায়ের সেই প্রতিবাদী চরিত্র আমার ভেতর জাগ্রত ছিল। তাই এলাকার যেকোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে নির্ভয়ে কথা বলি। এটাই এখন কাল হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘জুয়াড়িরা আমাকে মোবাইলফোনে কল করে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। এর অডিও রেকর্ড রয়েছে। তাদের মারধরে আমার বৃদ্ধ বাবা মারাত্মক জখম পেয়েছেন। তিনি বৃহস্পতিবার রাত থেকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে মো. শরীফের মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেন নি।

শুক্রবার (৯ জুলাই) কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার আমি ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে ভিকটিমকে উদ্ধার করি। এজাহার পাওয়া গেছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত যে বা যারাই থাকুক তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ঈদগাঁও থানার ওসিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’

এ বিষয়ে সর্বশেষ পদক্ষেপ জানতে চাইলে ঈদগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল হালিম বলেন, ‘বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।’

সম্পর্কিত পোস্ট