নিজস্ব প্রতিবেদক: কক্সবাজার পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের উত্তর নুনিয়ারছড়া এলাকায় অবকাঠামোর ক্ষতিপূরণের টাকা না দিয়ে বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ কাজ চলছে। ইতোমধ্যে ওখানকার অনেক বসতবাড়ী ভেঙে দেয়া হয়েছে। আরো ভাঙা হচ্ছে। একদিকে বিমানবন্দর কেড়ে নিচ্ছে নিজেদের মাথার গুজার ঠাঁইটুকু। অন্যদিকে ক্ষতিপূরণ টাকা পাচ্ছেনা ভিটেমাটি হারা মানুষগুলো। এমন অবস্থায় কঠিন দিনাতিপাত করছে ক্ষতিগ্রস্তরা।
সরেজমিন গেলে নুরুন্নাহার নামের এক মহিলা জানান, তার স্বামী মো. শফি ৮ বছর পূর্বে মারা গেছে। ২ মেয়ে ও ১ ছেলের সংসার চালায় দর্জি কাজ করে। বড় মেয়ে কক্সবাজার সিটি কলেজে, আরেক মেয়ে স্থানীয় একটি স্কুলে ৮ম শ্রেনীতে পড়ে। ছোট্ট বাঁশের ঘেরার দুই চালা বিশিষ্ট টিনের ঘরটি একমাত্র সম্বল নুরুন্নাহারের। মাথা গুজার একমাত্র ঠাঁইটুকু রেখে স্বামী মো. শফি মারা যায়।
তিনি জানান, বিমানবন্দরের কারণে তার শেষ আশ্রয়স্থলটুকু ভেঙে ফেলতে হচ্ছে। অন্য কোথাও জায়গা নিয়ে ঘর করার টাকা পয়সাও নেই। তিন সন্তান নিয়ে কষ্টের দিন কাটাতে হচ্ছে তাকে। অবকাঠামোর ক্ষতিপূরণের টাকাই মূল ভরসা নুরুন্নাহারের।
তিনি আরো জানান, বসতভিটার এসেমেন্ট করে ‘অবকাঠামো ক্ষতিপূরণ’ হিসেবে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৩৭৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ৬ ধারার নোটিশ দেয়া হয়। ৭ ধারা হয়েও ক্ষতি পূরণের টাকা নিয়ে গড়িমসি করা হচ্ছে।
একইভাবে সর্বহারা হওয়ার পথে ওই এলাকার আব্দু ছালাম, হোসেন আহমদ, সিরাজুল ইসলাম গং, জায়তুন্নাহার জনি, জাহাঙ্গীর আলম, খালেদা আক্তার, মো. ইসমাঈল, মেহেরজান, মো. কবিরসহ অন্তত ৫০ পরিবার। তাদের কেউই অবকাঠামো (বসতবাড়ী ও গাছপালা) ক্ষতিপূরণের টাকা পায়নি। অথচ তাদের নামে এল.এ মামলা নং-০৪/২০১৫-১৬ মূলে অধিগ্রহণকৃত জমির পরিমাণ ঠিক করে স্থিত অবকাঠামোর মূল্য নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ক্ষতিপূরণের টাকা না দিয়ে তাদের বসতভিটা ছেড়ে যাওয়ার জন্য বেশ কয়েকবার মৌখিক নির্দেশ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজানুর রহমান জানান, কোন বসতি উচ্ছেদ করার আগে নোটিশ করার বিধান আছে। জনগণকে পুনর্বাসন না করে উচ্ছেদ করার নজির নেই। আওয়ামী লীগ সরকার জনবান্ধব সরকার। ভিটেমাটি হারা মানুষগুলোর ক্ষতিপূরণ না দিয়ে জনবসতি উচ্ছেদ করা হলে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণহবে।
স্থানীয় মহিলা কাউন্সিলর শাহেনা আক্তার পাখি জানান, জনগণের জন্যই সরকার। মানুষের ক্ষতি করে কোন উন্নয়ন নয়। বিষয়টি জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তরা লিখিত আবেদন করেছে।
তবে, কক্সবাজার বিমানবন্দরের সিনিয়র উপসহকারী প্রকৌশলী তারেক আহমদ জমিগুলো ১৯৬২-৬৪ সালে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কেনা। নিয়ম অনুসারেই কাজ করছে বলে জানান।