নিজস্ব প্রতিবেদক: মূলধারার জনস্রোতে মিশে যাচ্ছে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা। শরণার্থী ক্যাম্পের বাইরে উখিয়া টেকনাফ ও দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূয়া জাতীয় পরিচয় পত্র ও জন্ম নিবন্ধন ব্যবহার করে বসবাস শুরু করেছে অনেকেই। কেবল তাই নয়, এ দফায় আসা রোহিঙ্গাদের চলে গেছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। ব্যবসা বাণিজ্য করার পাশাপাশি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও ভর্তি হয়েছেন এ জনগোষ্ঠির অনেক রোহিঙ্গা। উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার প্রায় অরক্ষিত ক্যাম্পগুলো থেকে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা। পালাতে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটকও হচ্ছে তারা। সর্বশেষ গতকাল শুক্রবারও চুয়াডাঙ্গার দর্শনা চেকপোস্টে পাঁচ রোহিঙ্গাকে আটক করেছে পুলিশ।
ভারত যাওয়ার সময় তাদের আটক করা হয়। তারা কুতুপালং, থাইনখালী, বালুখালী ও জামতলী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শরণার্থী। তাদের কাছ থেকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, দুপুরে দর্শনা চেকপোস্ট দিয়ে ভারত যাচ্ছিল পাঁচ যুবক। এসময় ইমিগ্রেশনে আসলে কথাবার্তায় সন্দেহ হলে তাদের আটক করে ইমিগ্রেশন পুলিশ। প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে দেশের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শরণার্থী বলে জানায় তারা। পরে তাদের দামুড়হুদা মডেল থানা পুলিশে হস্তান্তর করা হয়।
গত বছর ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে সে দেশের সেনাবাহিনী ও মগ সম্প্রদায়ের ববর্রতা, ধর্ষণ ও হত্যাযজ্ঞ থেকে বাঁচতে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গারা ২ উপজেলার ১৩ ক্যাম্পে অরক্ষিতভাবে বসবাস করছে। এরই মধ্যে তাদের হাতে ধ্বংস হয়ে গেছে উখিয়া বন রেঞ্জের পাঁচ হাজার একরের বেশি বনভূমি। এখনো রোহিঙ্গা বনভূমি ধ্বংস করে বসতি স্থাপন করেছে।
দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত অন্তত ১১ লাখ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু বাংলাদেশ সরকারের পাসপোর্ট অধিদপ্তরের নিবন্ধনের আওতায় এসেছে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো চারদিক থেকেই অরক্ষিত। কোনো ধরনের সীমানাপ্রাচীর দিয়ে আবদ্ধ না হওয়ায় প্রতিদিন রোহিঙ্গারা যে যার মতো করে চলাফেরার সুযোগ পেয়ে ক্যাম্প থেকে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। বিশেষ করে উখিয়ার কুতুপালং, ফলিয়া পাড়ার রাস্তার মাথা, মধুরছড়া, মাছকারিয়া, শিলেরছড়া, পাতাবাড়ী, লম্বাঘোনা, দরগাহবিল, হাঙ্গরঘোনা, আজুখাইয়া, তুলাতলী, ডেইলপাড়া, করইবনিয়াসহ কয়েকটি গ্রামের বিভিন্ন সড়ক ও উপসড়ক দিয়ে রোহিঙ্গারা চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
প্রতিদিন এসব গ্রামের বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে সিএনজি-টমটম ভাড়া করে সোজা কক্সবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছে তারা। শুধু তাই নয়, রোহিঙ্গারা কক্সবাজার থেকে দূরপাল্লার যানবাহন করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ফেনী ও কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরে চলে যাচ্ছে । অভিযোগ উঠেছে, আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের খাবার সামগ্রী ও সাহায্য করতে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে ছুটে আসে দেশের বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন। রোহিঙ্গাদের মধ্যে অব্যাহত ত্রাণ বিতরণের খবর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে মিয়ানমারে থাকা অবশিষ্ট রোহিঙ্গারাও এ দেশে চলে আসে।
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ শুরুর পর ক্যাম্পে এসে ত্রাণ বিতরণের নামে অসংখ্য ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন নগদ টাকা বিতরণ শুরু করলে নৈরাজ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
স্থানীয় প্রশাসন রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খায়। পরে সরকারের নির্দেশে সেনাবাহিনীকে রোহিঙ্গাদের দেখাশোনার দায়িত্ব দেয়া হয়। প্রায় এক সপ্তাহের চেষ্টায় সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনে।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, রোহিঙ্গারা সাময়িকভাবে ১৩টি ক্যাম্পে অবস্থান করলেও তাদের মধ্যে কোনো শৃঙ্খলা নেই। তারা প্রতিদিন ক্যাম্প থেকে বের হয়ে বাংলাদেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে। কোনো কোনো সূত্র থেকে জানা গেছে, গত নয় মাসে অন্তত লক্ষাধিক রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু ক্যাম্প থেকে পালিয়ে গেছে। বায়োমেট্রিক পদ্ধতির পর রোহিঙ্গারা সেই গণনা অনুযায়ী ক্যাম্পে আছে কিনা, তদন্ত করে দেখা উচিত বলে মনে করেন স্থানীয়রা।