জসিম সিদ্দিকী, কক্সবাজার: পরিবেশ রক্ষার লক্ষ্যে কক্সবাজারের কুতুপালংয়ে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প-৪ এক্সটেনশনে ১৯ জানুয়ারি বাঁশ টেকসইকরণ কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলো। সকাল ১১ টায় এর উদ্বোধন করেন শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের প্রধান আবুল কালাম।
এসময় উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজারে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) কার্যক্রম প্রধান মারিন ডিন কাজডমকাজ এবং ব্র্যাকের মানবিক সহায়তা কর্মসূচির প্রধান আবদুস সালাম।
কক্সবাজার জেলায় মিয়ানমার থেকে উচ্ছেদকৃত দুই লাখ চল্লিশ হাজার রোহিঙ্গা পরিবারকে আশ্রয় দেয়ার জন্য সরকারের নীতিনির্দেশনায় বাঁশের তৈরি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়, যা স্থানীয় পরিবেশের ওপরে বিপুল চাপ সৃষ্টি করেছে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় এবং খাদ্যবহির্ভুত মানবিক সহায়তা প্রদানে কর্মরত সংস্থাগুলোর একটি জরিপে দেখা যায়, আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে এ পর্যন্ত ২ কোটি ২০ লাখের মতো বাঁশ ব্যবহার করা হয়েছে। এই বিপুল পরিমাণ বাঁশ ব্যবহারের কারণে এর সরবরাহ ক্রমশ: অপ্রতুল হয়ে পড়েছে।
তাছাড়া বর্তমানে মানসম্মত বাঁশ পাওয়াও যাচ্ছে না। বর্তমানে যে অপরিণত বাঁশ পাওয়া যাচ্ছে, তা মাত্র দুই বছরের মধ্যেই বদলাতে হবে। তাই ইউএনএইচসিআর ও ব্র্যাক যৌথভাবে এই বাঁশ টেকসইকরণ প্ন্যান্ট স্থাপন করেছে। এই কারখানায় আশ্রয় কেন্দ্রের কাঠামো তৈরিতে ব্যবহৃত ‘বরাক’ জাতের বাঁশ প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে টেকসই করা হবে। এর ফলে বাঁশগুলো ছত্রাক, ক্ষতিকর পোকামাড় থেকে রক্ষা পাবে ও ১০/১২ বছর পর্যন্ত টিকে থাকবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের প্রধান আবুল কালাম বলেন, এখানে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের মূল উপকরণই হচ্ছে বাঁশ। এই ট্রিটমেন্ট প্ন্যান্টের মাধ্যমে বাঁশের স্থায়িত্ব বাড়ানোর ফলে একদিকে যেমন আশ্রয়কেন্দ্রগুলো মজবুত ও টেকসই হবে, অন্যদিকে পরিবেশের বিপর্যয়ও কমে আসবে। আমরা সহযোগীদের সঙ্গে নিয়ে এরকম পরিবেশ বান্ধব ও মানবকল্যাণমূলক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে চাই। ইউএনএইচসিআর-এর কার্যক্রম প্রধান মারিন ডিন কাজডমকাজ বলেন, ‘বিশ্বের যেখানেই মানবিক সংকট যখন বাড়ছে, ইউএনএইচসিআর সেখানেই গিয়ে পাশে দাঁড়ায়। এ ক্ষেত্রে শরণার্থীদের আশ্রয়কেন্দ্র ও তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশ রক্ষায় আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকি। বাংলাদেশ সরকারের সহায়তা ও ব্র্যাকের অংশীদারত্বের ফলে এখানকার স্থানীয় প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও রোহিঙ্গাদের কল্যাণে আমরা এরকম একটি প্ন্যান্ট নির্মাণে সফল হয়েছি।
ব্র্যাকের মানবিক সহায়তা কর্মসূচির প্রধান আবদুস সালাম বলেন, এই উদ্যোগের ফলে কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠী এবং ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী-উভয়ই দারুণভাবে উপকৃত হবে। অধিকতর টেকসই বাঁশ ব্যবহারের ফলে স্বাভাবিকভাবেই পরিবেশের ক্ষতির পরিমাণ হ্রাস পাবে।
রোহিঙ্গারা অধিকতর নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করতে পারবেন। ১ উদ্যোক্তারা জানান, এই টেকসইকরণ প্ন্যান্টে ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। প্রতিদিন ২০ জন রোহিঙ্গা শ্রমিক বরাক জাতের বাঁশ বরিক এবং সোহাগার দ্রবণে ডুবিয়ে রাখার কাজ করেন। ১০/১৫ দিন পর এগুলো দ্রবণ থেকে তুলে ৩/৪ দিন শুকানো হয়।
নিবিড় গবেষণায় দেখা গেছে, বরিক-সোহাগার দ্রবণ মানবদেহ, ভূগর্ভস্থ পানি, মাটি, গাছ ও প্রাণিসহ পরিবেশের কোনো ক্ষতি করে না। ব্র্যাকের হিসাব অনুযায়ী, এ ধরনের একটি প্ন্যান্ট থেকে মাসে ২ হাজার ৪০০ প্রক্রিয়াকৃত বাঁশ পাওয়া যাবে। ইউএনএইচসিআর এবং ব্র্যাকের এই কার্যক্রম আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই উখিয়া ও টেকনাফে এরকম আরও ৫টি প্ন্যান্ট স্থাপন করা হবে। প্ন্যান্টগুলোর মাধ্যমে ১০ হাজার ৮০০ থেকে ১২ হাজার বাঁশ টেকসই করা সম্ভব হবে।