ডেস্ক রিপোর্ট:কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণসহ অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করতে যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এরই অংশ হিসেবে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় ‘কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক উন্নয়ন’ প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৪৫৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা।
এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৭০ কোটি ৬৪ লাখ টাকা এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অনুদান থেকে ৩৮৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় প্রকল্পটি উপস্থাপনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছে পরিকল্পনা কমিশন। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে স্থানীয় নিরাপদ যোগাযোগ নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি, শরণার্থীদের জন্য ত্রাণসামগ্রী পরিবহন ও যানচলাচল সহজতর হবে।
এ প্রসঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, এডিবির সঙ্গে ৯ আগস্ট ইআরডির ১০ কোটি মার্কিন ডলার বা ৮৪০ কোটি টাকার অনুদান চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
এছাড়া ৩ থেকে ৭ জুন এডিবির ফ্যাক্ট ফাউন্ডিং মিশনের এইড মেমোয়ার অনুযায়ী ওই ১০ কোটি ডলারের মধ্যে কক্সবাজার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের অনুকূলে ২ কোটি ৭০ লাখ ডলার বা ২২৬ কোটি টাকার সংস্থান রয়েছে।
এছাড়া পরবর্তী ফেজ-২-এ ১০ কোটি মার্কিন ডলারের অনুদান চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে সেখান থেকেও অনুদান পাওয়ার আশা করা হচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে অর্থ সংস্থানের সমস্যা হবে না।
সূত্র জানায়, গত কয়েক দশকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় ৩ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী। এর সঙ্গে গত বছরের আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত আরও ৭ লাখ রোহিঙ্গা যোগ হয়েছে। এই ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী কক্সবাজার জেলার ৩৩টি ক্যাম্পে বসবাস করছে।
বিশাল এই জনগোষ্ঠীর খাদ্য, বাসস্থান, স্বাস্থ্য, পয়ঃনিষ্কাশন, পানি সরবরাহ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে স্থানীয় জনসাধারণের সমস্যা সৃষ্টিসহ অর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা এবং অন্যান্য সাহায্য সংস্থার মানবিক সহায়তা হিসেবে খাদ্য, পানি, স্বাস্থ্য সহায়তা ও অস্থায়ী যে বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে, তা অপ্রতুল।
এ পরিপ্রেক্ষিতে শরণার্থীদের কাছে মৌলিক চাহিদা হিসেবে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়ার জন্য অবকাঠামো বিশেষ করে রাস্তাঘাট উন্নয়ন করা প্রয়োজন। এজন্য এডিবির অনুদানে কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কটি উন্নয়নের প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত প্রকল্পের ওপর ১২ আগস্ট পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার বিভিন্ন সুপারিশ প্রতিপালন করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রমগুলো হচ্ছে- ৭২ দশমিক ৭৬ কিলোমিটার পেভমেন্ট নির্মাণ, ৮ হাজার মিটার রিজিড পেভমেন্ট নির্মাণ, ৪ লাখ ১১ হাজার ৪৩ ঘনমিটার মাটির কাজ, ১০৬ মিটার ২৭টি কার্লভার্ট তৈরি এবং ৬ হাজার ৬০০ মিটার টোওয়াল নির্মাণ।
এর আগে ৯ আগস্ট রোহিঙ্গাদের সহায়তার অংশ হিসেবে এডিবির সঙ্গে অনুদান চুক্তি শেষে ইআরডি সিনিয়র সচিব কাজী শফিকুল আযম বলেছিলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য এ সহায়তা খুবই প্রয়োজন। এডিবির সঙ্গে আলোচনা শুরুর মাত্র দুই মাসের মাথায় অনুদান চুক্তি করা সম্ভব হয়েছে। এজন্য এডিবির প্রেসিডেন্টসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এডিবি মোট ২০ কোটি ডলার অনুদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তার মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ১০ কোটি ডলারের চুক্তি হল। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সফলতার ওপর নির্ভর করে পরবর্তী ১০ কোটি ডলার সহায়তা পাওয়া যাবে।
একই অনুষ্ঠানে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ বলেন, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং ইআরডির সচিব সম্প্রতি এডিবির প্রেসিডেন্টের কাছে কক্সবাজারে আশ্রিত জনগোষ্ঠীর জন্য সহায়তা চেয়েছিলেন। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে এডিবি দ্রুততম সময়ে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রকল্পটির উদ্দেশ্য সম্পর্কে একনেকের জন্য তৈরি সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে শরণার্থী ক্যাম্পে যোগাযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা হবে। সুত্র- যুগান্তর