কক্সবাজারে পাহাড় ধস ও বানে ভেসে প্রাণ গেল ২০ জনের
কক্সবাজার জেলাজুড়ে টানা ভারি বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। অতি বর্ষণে পাহাড় ধস ও বানে ভেসে গত দুদিনে ছয় রোহিঙ্গাসহ ২০ জন নিহত হয়েছেন।
এদের মধ্যে পাহাড় ধসে টেকনাফের হ্নীলা পাহাড়ের পাদদেশে একই পরিবারের পাঁচজন, হোয়াইক্যং এলাকায় একজন, উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুটি পরিবারে পাঁচজন ও একজন স্থানীয়, মহেশখালীর দুজন এবং বানের পানিতে তলিয়ে ঈদগাঁওয়ের তিনজনসহ সাতজন মারা যান। মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) সকাল থেকে বুধবার (২৮ জুলাই) বিকেল পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে।
অন্যদিকে, গত তিনদিনের অব্যাহত বৃষ্টির ফলে জেলার নয় উপজেলার প্রায় প্রতিটি এলকায় পানিবন্দি অবস্থায় দুর্ভোগে রয়েছে কয়েক লাখ মানুষ। ঈদগাঁও ফুলেশ্বরী নদীর ঢলের তোড়ে ধসে গেছে বাণিজ্যিক সড়কের প্রায় ১০০ ফুট এলাকা।
টেকনাফ:
বুধবার ভোরে টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের ভিলেজারপাড়ার সৈয়দ আলমের বাড়িতে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। এ সময় মাটির নিচে চাপা পড়ে যাওয়া সৈয়দ আলমের পাঁচ সন্তানের মরদেহ উদ্ধার করেন স্থানীয়রা।
নিহতরা হলেন- টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পাহাড়ি গ্রাম ভিলেজার পাড়া এলাকার সৈয়দ আলমের ছেলে আব্দু শুক্কুর (১৬), মোহাম্মদ জুবাইর (১২), আবদুর রহিম (৫), মেয়ে কহিনুর আক্তার (৯) ও জয়নবা আক্তার (৭)।
এদিকে, মঙ্গলবার পাহাড় ধ্বসে টেকনাফের হোয়াইক্যং এলাকায় রকিম আলী (৪৭) নামে একজন নিহত হন। তিনি হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মনিরঘোনা গ্রামের মৃত আলী আহমদের ছেলে।
উখিয়া:
ভারী বর্ষণে বুধবার ও মঙ্গলবার কক্সবাজারে উখিয়ায় পাহাড় ধসে এবং পানিতে ডুবে শিশুসহ ছয়জন রোহিঙ্গা ও তিনজন স্থানীয় নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছে অন্তত আরও পাঁচজন।
নিহতরা হলেন- উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের চোরাখোলা এলাকার মৃত আলী আহমদের ছেলে আবদুর রহমান (৪৫), ১০ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জি-৩৭ ব্লকের নুর মোহাম্মদের মেয়ে নুর নাহার (৩০), শাহা আলমের ছেলে শফিউল আলম (১২), জি-৩৮ ব্লকের ইউসুফের স্ত্রী দিল বাহার (২৪) ও তাদের দুসন্তান আব্দুর রহমান (৪) ও আয়েশা ছিদ্দিকা (২)। এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ধইল্যাঘোনা এলাকার হাবিবুর রহমানের ছেলে আলী আকবর (৩৫), ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মালিয়ারকুল এলাকার মো. ইসলামের ছেলে মো. রুবেল (২২) ও বাহার।
মহেশখালী:
দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীতে পৃথক দুটি ইউনিয়নে এক বৃদ্ধ এবং এক কিশোরী পাহাড় ধসে নিহত হয়েছেন। এরা হলেন- হোয়ানক ইউনিয়নে রাজুয়ার ঘোনার বাসিন্দা আলী হোসেন (৬৮) ও মহেশখালী ইউনিয়নের সিপাহীপাড়া এলাকার আনসার হোসেনের মেয়ে মোর্শেদা বেগম (১৪)।
এদিকে, ঈদগাঁও উপজেলায় ঢলের পানিতে নিমজ্জিত দরগাহপাড়া এলাকায় স্রোতের মাঝে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ তিনজনের মরদেহ মিলেছে। বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আনু মিয়া সিকদারের ইটভাটার পাশের খালে তাদের মরদেহগুলো উদ্ধার করে দমকল বাহিনী ও নিখোঁজের স্বজনরা।
নিহতরা হলেন- দরগাহপাড়া গ্রামের মোহাম্মদ শাহাজাহানের দুই ছেলে মোহাম্মদ ফারুক (২৬) ও দেলোয়ার হোসেন (১৫) এবং আবছার কামালের ছেলে মোহাম্মদ মোরশেদ (১৪)।
ঈদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ছৈয়দ আলম জানান, ঈদগাঁও ফুলেশ্বরী নদীর ঢলে ডুবে থাকা দরগাহপাড়া-ভাদিতলা মুক্তিযোদ্ধা ছুরুত আলম সড়কের কাঠের সাঁকো এলাকায় তিনজন নিখোঁজ হন। স্থানীয়দের পাশাপাশি দমকল বাহিনীর সদস্যরাও উদ্ধারকাজে যোগ দেন। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে স্থানীয় খালে পৃথক জায়গা থেকে তাদের তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
রামু ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা সৌমেন বড়ুয়াও এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকার আবহাওয়াবিদ মো. আবদুর রহমান জানান, মঙ্গলবারের মতো বুধবারও ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সোমবার ১২টা থেকে বুধবার ১২টা পর্যন্ত ৩৬ ঘণ্টায় কক্সবাজার জেলায় ১৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামীকালও ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে পাহাড় ও ভূমি ধসের সম্ভাবনা রয়েছে। সাগরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত বলবত থাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে। জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মামুনুর রশীদ জানান, শ্রাবণের অতিবর্ষণে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। ঢল নেমেছে ঈদগাঁওর ফুলেশ্বরী, চকরিয়ার মাতামুহুরি ও রামুর বাঁকখালীতে। জলমগ্ন হয়েছে জেলার নয় উপজেলার সমতলও। শত শত বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে জলবন্দী হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। ডুবে গেছে রাস্তা-ঘাট। জেনেছি রান্নাও বন্ধ রয়েছে অনেক পরিবারে। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মানুষের দুর্ভোগ লাগবে কাজ করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
ডিসি আরও জানান, টেকনাফ-উখিয়া ও মহেশখালীতে পাহাড় ধ্বসে নিহত সবার পরিবারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতা দেয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও বিভিন্ন উপজেলায় পাহাড় ধ্বসে এবং বানের পানিতে ভেসে এ পর্যন্ত ১৫ জন নিহত হয়েছে বলে খবর পেয়েছি। মৃত্যুর ঝুঁকি এড়াতে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের সরিয়ে নিতে মাইকিং ও অভিযান চলছে।