জসিম সিদ্দিকী, কক্সবাজার: অবশেষে কক্সবাজারের ৪ আসনের মধ্যে ৩টি আসনের প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। ফলে ঝুলে রইল মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সাবেক সাংসদ আলমগীর মো. মাহফুজ উল্লাহ ফরিদের ভাগ্য। কক্সবাজার-২ আসনটি ২০ দলীয় জোট কিংবা ঐক্যফ্রন্টের কোন শরীককে দিচ্ছে কিনা তা এখনো জানা যায়নি।
তবে শুরু থেকেই সাবেক সাংসদ জামাতের কেন্দ্রিয় নেতা হামিদুর রহমান আযাদকে পুনরায় ছেড়ে দেয়ার খবর ভোটের মাঠে চাউর হয়। আসলে উক্ত আসন থেকে কাকে মনোনয়ন চূড়ান্ত করছে তা জানা যাবে ৮ ডিসেম্বর। তবে কক্সবাজার সব ক’টি আসনে যে গরম নির্বাচন চলবে তা বিএনপির প্রার্থীদের মনোনয়ন দেখে সহজে অনুধাবন করা যায়।
প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্তের বিষয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক হুইপ শাহজাহান চৌধুরী সংবাদকে জানান, একাদশ জাতীয় সংস নির্বাচন উপলক্ষ্যে কক্সবাজার জেলার চারটি আসনের মধ্যে তিনটিতে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। টিকেট নিশ্চিত হওয়া প্রার্থীগণ হলেন কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) এডভোকেট হাসিনা আহামদ, কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) লুৎফুর রহমান কাজল ও কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে শাহজাহান চৌধুরী। ২৬ নভেম্বর বেলা আড়াইটার দিকে বিএনপি’র চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উক্ত প্রার্থীতা নিশ্চিত করেন। প্রার্থীদের উক্ত স্বাক্ষরিত স্ব স্ব আসনের মনোনয়নপত্র হস্তান্তর করা হয় বলে তিনি জানান। তবে কক্সবাজার -২ আসনের প্রার্থীতা এখনো নিশ্চিত করা হয়নি। এ আসন থেকে কাকে মনোনয়ন দেবে তা ৮ ডিসেম্বর জানা যাবে।
এদিকে কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের জন্য বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক দু’বারের সংসদ সদস্য আলমগীর মোঃ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ। ২৭ নভেম্বর তাঁকে দলীয় মনোনয়নপত্র তুলে দিয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড। এই মনোনয়ন পেয়ে উল্লাসে ফেটে পড়েছে আলমগীর ফরিদের অনুসারী। তবে বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, এখনই আলমগীর ফরিদ বা তাঁর অনুসারীদের খুশি হয়ে তেমন লাভ নেই! কারণ আলমগীর ফরিদকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। জোটগতভাবে তাঁকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়া হয়নি। কক্সবাজার জেলা বিএনপির এক শীর্ষ নেতা এমনটি জানিয়েছেন। সূত্রমতে, বিএনপি এখন দলীয়ভাবে মনোনয়ন দিচ্ছে। এক আসনে একাধিক প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়নপত্রও দেয়া হচ্ছে। তবে চূড়ান্ত মনোনয়ন নিশ্চিত করা হবে আগামী ৮ ডিসেম্বর।
অপরদিকে নির্বাচনের প্রস্তুতি বিষয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি শাহাজাহান চৌধুরী আরো বলেন, আমরা কেন্দ্রের নির্দেশে নির্বাচনের জন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। গতকাল প্রার্থীতা নিশ্চিত হওয়ার পর জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় তৃনমূলে নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসাহ উদ্দিপনা সৃষ্টি হয়েছে। ভোটাররা নিবিঘের্œ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ যেন করতে পারে সেই মাঠ নিশ্চিত করা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। ভোটের মাঠে এখনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সৃষ্টি হয়নি দাবি করে উখিয়া-টেকনাফ আসনের এ প্রার্থী বলেন- টেকনাফের ভোটাররা এখনো আতংকিত। প্রতিদিন মাদক বিরোধী অভিযান চলছে। চলছে ক্রসফায়ার। আমরা ও চাই মাদক সমূলে নিমূর্ল হোক, মাদকমুক্ত হোক টেকনাফ তথা পুরো কক্সবাজার। তবে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত অর্থাৎ ভোটের দিন পর্যন্ত সাধারন মানুষের আতংক কমাতে অভিযান যেন শিথিল করা হয়। সাধারন মানুষ যেন ভয়হীন ভোট কেন্দ্রে যেতে পারে। ভোট দিতে পারে।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা বিএনপির কয়েকজন নেতা জানান, মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সাবেক সাংসদ জামাতের কেন্দ্রিয় নেতা হামিদুর রহমান আযাদ যদি নির্বাচন করতে পারে তাহলে হয়ত তাকে জোটগতভাবে মনোনয়ন দিতে পারে। আইনি জটিলতা কিংবা আসন ভাগাভাগির মারপ্যাঁচে যদি বিএনপির সাবেক সাংসদ আলমগীর ফরিদ বাদ পড়েন তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবেনা বলে উক্ত নেতাদের অভিমত।
উল্লেখ্য, কক্সবাজারের মনোনয়নপ্রাপ্ত তিনজনই স্ব স্ব আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। তারা অতীতে তাদের বিশ্বাসের মর্যাদা দিয়েছেন বলে বিএনপির কয়েকজন নেতার দাবি। সরকার ভোটের মাঠে নিরপেক্ষতা বজায় রেখে ভোটারদের অধিকার ভোটদানের সুযোগ সৃষ্টি করলে কক্সবাজারের সব আসনে বিপুল ভোটে বিএনপি বিজয় লাভ করবে বলে নেতাদের দাবী।