নিজস্ব প্রতিবেদক: কক্সবাজার ৪ আসনের (উখিয়া-টেকনাফ) সাধারণ ভোটারসহ দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা ছিল বদির পরিবর্তে দলের গ্রহণযোগ্য, পরীক্ষিত এবং জনপ্রিয় নতুন প্রার্থী নিয়ে। তবে দলীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গত মঙ্গলবারে বদির পরিবর্তে তার স্ত্রী শাহিন চৌধুরীকে প্রার্থী ঘোষণা করে সাংবাদিকদের দেয়া বক্তব্যে ভীষণ হতাশ ও মর্মাহত হয়েছে এ আসনের আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা। পাশাপাশি সাধারণ ভোটাররাও বিষয়টিকে নেতিবাচক হিসেবে নিয়েছেন। এদিকে আসনটির বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মীরাও বেজায় খুশি ক্ষমাতাসীন দলের এমন মনোনয়নে।
কক্সবাজার-৪ আসনে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বর্তমান সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি বাদ পড়ার গুঞ্জন জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে আগে থেকে চলছিল। কারণ, বর্তমান সংসদ সদস্য বদি দুদকের মামলায় দন্ডপ্রাপ্ত এবং ইয়াবাসহ নানা কর্মকান্ডে দেশব্যাপী সমালোচিত ও বিতর্কিত। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ঘোষণায় শেষ পর্যন্ত বদি নৌকার মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছে এবং সেটি দলীয়ভাবে প্রায় নিশ্চিত।
সীমান্ত শহর টেকনাফের দলীয় নেতাকর্মীরা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানান, সংসদ সদস্য বদির বিতর্কিত কর্মকান্ড দেশব্যাপী সমালোচিত। তাই বদিকে বাদ দিয়ে তার স্ত্রীকে মনোনয়ন দেয়া মুদ্রার এপিট-ওপিট। এছাড়া বদির স্ত্রী আওয়ামী লীগ করতেন কি না সেটা সাধারণ মানুষের কাছে জানা ছিল না। তাকে মনোনয়ন দেয়া মানে উখিয়া টেকনাফের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের পরিক্ষিত, ত্যাগী ও যোগ্য নেতাদের অবজ্ঞা করা। এ বিষয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা দলীয় নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত প্রত্যাশা করেন।
কক্সবাজার জেলা যুবলীগের সভাপতি ও দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী সোহেল আহমদ বাহাদুর বলেন, উখিয়া-টেকনাফের আসনটি দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল আসন। প্রায় দশ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা অধ্যূষিত এই এলাকায় সাড়ে ৩ হাজারের বেশি বিদেশী নাগরিক রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কাজ করে। সেক্ষেত্রে একজন অরাজনৈতিক মহিলা কিভাবে এ জনগোষ্ঠিকে নেতৃত্ব দিয়ে এত বিশাল চাপ সামাল দেবেন!
টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর বলেন, এমপি বদির স্ত্রী আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যও নন। এমনকি তিনি টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফরমও পূরণ করেননি।
জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য ও নৌকার মনোয়ন প্রত্যাশী সোনা আলী বলেন, সংসদ সদস্য বদির স্ত্রীর মনোনয়ন প্রাপ্তির বিষয়টি এখনো অনিশ্চিত, দলীয় সাধারণ সম্পাদক মৌখিকভাবে ঘোষণা দিলেও ঘন্টায় ঘন্টায় প্রার্থী পরিবর্তন হতে পারে। এখনো চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের সময় আসেনি। এ ব্যাপারে দলীয় সভানেত্রী যে সিদ্ধান্ত দেবেন তাই চূড়ান্ত বলে প্রতীয়মান হবে।
এদিকে বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি ও তার স্ত্রীসহ দলীয় মনোনয়ন দৌঁড়ে এগিয়ে ছিলেন উখিয়া ও টেকনাফের বেশ ক’জন ত্যাগী নেতা। তাদের মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য ও টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী, উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, টেকনাফ উপজেলা পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি শফিক মিয়া, কক্সবাজার জেলা যুবলীগের সভাপতি সোহেল আহমদ বাহাদুর, তাঁতী লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাধনা দাশ গুপ্তা, টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর উখিয়ার মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান ও মন্ত্রী পরিষদ সচিব শফিউল আলমের ছোটভাই শাহ আলমের নাম উল্লেখযোগ্য।
এদিকে বদির স্ত্রীর মনোনয়ন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে উখিয়া ও টেকনাফের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগে নিস্তব্ধ নিরবতা ও হতাশা বিরাজ করছে। তবে গতকাল টেকনাফ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ব্যানারে বিকালে পৌর শহরে একটি আনন্দ মিছিল বের হয়। মিছিলটিতে বেশ ক’জন তালিকাভূক্ত ইয়াবা কারবারিকে দেখা যায়।