ঢাকারবিবার , ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮
আজকের সর্বশেষ সবখবর

টহল জোরদার, আরও ৫ লাখ রোহিঙ্গা আসার অপেক্ষায়

প্রতিবেদক
সিএনএ

সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৮ ৬:৩২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

কক্সবাজার : সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ এখনো থামেনি। অনুপ্রবেশকারীদের দাবি, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর সে দেশের সেনারা এখনো নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। যারা সেখানে আছে তাদের ক্রীতদাস বানিয়ে রাখা হয়েছে। নির্যাতন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার অপেক্ষায় রয়েছে রাখাইনের বাকি রোহিঙ্গারা। আর রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের চেষ্টা অব্যাহত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে রোহিঙ্গা নেতারা।
তারা জানিয়েছে, নিপীড়নের হাত থেকে বাঁচতে আরও প্রায় ৫ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসার অপেক্ষায় রয়েছে। প্রায় প্রতি রাতে কেউ না কেউ ওপার থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। তাদের অধিকাংশ নাফনদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসছে। তিনশ’ রোহিঙ্গা ওপারের সীমান্তের বন-জঙ্গলে প্রবেশ করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার অপেক্ষা করছে বলে খবর পেয়েছে রোহিঙ্গা নেতারা।
টেকনাফ লেদা রোহিঙ্গা শিবিরের চেয়ারম্যান আবদুল মতলব জানান, ‘রাখাইনের যেসব রোহিঙ্গা এখনও বাংলাদেশে আসতে পারেনি, তাদের আসলে আটকে রাখা হয়েছে। সেনারা তাদের অবরুদ্ধ করে রেখেছে স্থানীয় হাটবাজারেও তাদের যেতে দেয়া হচ্ছে না। এর ফলে খাবারের সঙ্কটে রয়েছে রোহিঙ্গারা। মানবেতর জীবনযাপনের জন্য তাদেরকে বাধ্য করা হচ্ছে। এ কারণে সুযোগ পেলেই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি সদ্য অনুপ্রবেশকারীদের বরাত দিয়ে আরও বলেন, ‘সেখানে সেনারা বড় আকারে জুলুম না করলেও ভেতরে ভেতরে কৌশলগত জুলুম চালিয়ে যাচ্ছে। রাখাইনের রাজধানী শিত্তুই বা আকিয়াব, রাথিডং, মংডুসহ পুরো রাজ্যের ১৭টি ‘টাউনশিপে’ পাঁচ লাখের মতো রোহিঙ্গা আছে। সেখানকার রোহিঙ্গারা যেহারে খ-খ-ভাবে অনুপ্রবেশ করছে, তাতে একদিন সবাই এপারে চলে আসবে।’
জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) দেয়া তথ্য মতে, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ১৩ হাজার ৭৬৪ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। চলতি সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম ১৫ দিনে নাফনদী পেরিয়ে ৫৩১ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে আগস্টে এসেছে ২৫৬ জন এবং জুলাইতে ৪১৩ জন। এরআগে ২০ মে থেকে ২২ জুলাইয়ের মধ্যে নতুন আসা ৩ হাজার রোহিঙ্গার সন্ধান পাওয়া গেছে। এসব অনুপ্রবেশকারীরা বেশির ভাগই টেকনাফের সাবরাং ও এর আশপাশের এলাকা থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)। তবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে জিরো টলারেন্সে রয়েছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
বিজিবি সূত্রে জানা যায়, সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গারা এখনও নৌকা নিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ চলতি বছরের ১৩ আগস্ট একটি নৌকায় করে ১২ জন রোহিঙ্গা সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালায়। এসময় বিজিবি টহল দলের সদস্যরা তাদের বাধা দেয়। এছাড়া সেপ্টেম্বর মাসের গত শুক্রবার নাফনদী পেরিয়ে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের সময় সাত রোহিঙ্গাবাহী একটি নৌকা পুশব্যাক করা হয়েছে। তবে একই দিন আরও ২টি নৌকায় করে প্রায় ১২ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে’ বলে দাবি করেছে সীমান্তের বসবাসকারীরা।
এ প্রসঙ্গে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) টেকনাফ-২ ব্যাটেলিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর শরীফুল ইসলাম জোমাদ্দার বলেন, রোহিঙ্গারা এখনও অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে। কোনও অবৈধ অনুপ্রবেশকারীকে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না।
রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রবিউল হাসানও। তবে তিনি বলেন, নতুন করে কোন রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। সীমান্তে কড়া নজরদারি রয়েছে, কেউ অনুপ্রবেশের চেষ্টা করলে তাকে ফেরত পাঠানো হবে।

সম্পর্কিত পোস্ট
Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com