ঢাকাশনিবার , ১৮ আগস্ট ২০১৮
আজকের সর্বশেষ সবখবর

শান্তির দূতের বর্ণাঢ্য জীবন

প্রতিবেদক
সিএনএ

আগস্ট ১৮, ২০১৮ ১০:০৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

কফি আত্তা আনান। পশ্চিম আফ্রিকার দেশ ঘানায় জন্ম হয় ১৯৩৮ সালের ৪ এপ্রিল। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী কফি আনান বিশ্বের একজন শীর্ষ কূটনীতিক। জাতিসংঘের মহাসচিব থাকাকালে ২০০১ সালে তিনি নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন।

পশ্চিম আফ্রিকার অভিজাত বোর্ডিং স্কুল থেকে পরিণত হন একজন ক্ষুরধার কূটনীতিক হিসেবে। বিশ্বের নানা সমস্যার সমাধানে তিনি নিজের জীবনের অধিকাংশ সময়ই ব্যয় করেছেন। এইচআইভি এইডস থেকে শুরু করে ইরাক যুদ্ধ ও জলবায়ু সংক্রান্ত নানা সমস্যা নিয়ে কাজ করেছেন। কখনো নিজে উড়ে গিয়েছেন দুর্গত এলাকায় আবার কখনো প্রতিনিধি পাঠিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছেন।

এমন সব মানবতাবাদী কাজের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কারই শুধু হাতে ওঠেনি,  সমালোচকদেরও মন জয় করেছেন।

কফি আনান এমন একজন মানুষ যিনি প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান হয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের পদে আসীন হয়েছেন। নোবেল বিজয়ী এ কূটনৈতিককে বলা হয় আধুনিক ইতিহাসের একজন ক্ষুরধার কূটনৈতিক।

যেভাবে উত্থান

কফি আত্তা আনান ও তার বোন এফুয়া আত্তা আনান গোল্ড কোস্টের কুমাসিতে জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩৮ সালে। এফুয়া তার জমজ বোন। তাদের প্রথম নামের মানে ‘শুক্রবারে জন্ম’। আর মাঝের নাম দিয়ে বোঝায় তারা জমজ শিশু।

তিনি বেড়ে উঠেছেন এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। ব্রিটিশ শাসনের আমলে তার দাদা ছিলেন একজন নেতা এবং তার বাবা ছিলেন প্রাদেশিক গভর্নর।

ভবিষ্যতের কূটনৈতিক কফি আনানের ১৯ বছর বয়স হওয়ার দুই দিন আগে ঘানা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে মানচিত্রে স্থান নেয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আর কখনো কারো অধীনে থাকতে হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষে প্রথমে তিনি  সদ্য স্বাধীন নিজের দেশেই প্রথম চাকরি করেন। তারপর যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাকালেস্টার কলেজের অর্থনীতেতে পড়াশোনা করেন। এমআইটিতে পড়েছিলেন ম্যানেজমেন্ট নিয়ে। ম্যাকালেস্টার কলেজে থাকাকালীন  জাতিসংঘে চাকরি শুরু করেন। ১৯৬২ সালে তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাজেট অফিসার হিসেবে কাজ শুরু করেন।

১৯৭৪-৭৪ সাল পর্যন্ত তিনি ঘানার ট্যুরিজম বিভাগের পরিচালক ছিলেন। ১৯৮০ সালে তিন জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৮৩ সালে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন।

১৯৮৭ সাল থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত জাতিসংঘের তিনটি বিভাগের (মানব সম্পদ, ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা) দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

১৯৯০ থেকে ১৯৯২ পর্যন্ত পরিকল্পনা, বাজেট ও অর্থ বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন কফি আনান। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত শান্তিরক্ষা মিশনের প্রধান হিসেবে কাজ করেন।

গণহত্যা

১৯৯৩ সালে তিনি জাতিসংঘের মহাসচিবে অধীনের শান্তিরক্ষা মিশনের প্রধান হিসেবে কাজ শুরু করেন। তখনই রুয়ান্ডায় গণহত্যার ঘটনা ঘটে। এ সময় রুয়ান্ডায় প্রায় আট লাখ তুতসি ও মডারেট হুথিকে হত্যা করা হয়। দু’বছর না পেরোতেই বসনিয়ায় সার্বিয়ান সেনারা ৮ হাজার মুসলিমকে হত্যা করে।

এ দুটি গণহত্যার জন্য কফি আনান ও তার বিভাগকে প্রশ্নের মুখোমুখি করা হয়। অভিযোগ তোলা হয় গণহত্যার বিভিন্ন তথ্যকে তারা অগ্রাহ্য করেছেন। রুয়ান্ডা গণহত্যার পরিকল্পনা হচ্ছে এমন তথ্য দেওয়ার পরও কর্ণপাত করেননি তারা।

তবে ২০০৪ সালে কফি আনান গণহত্যার বিষয়ে মুখ খোলেন। তিনি বলেন, ‘শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের প্রধান থাকাকালে প্রায় ১২টি দেশের কাছে সেনা চাওয়া হয়েছিল। এ পদে থাকাকালীন আমি  আমার সর্বোচ্চটাই দিয়েছিলাম।’

১৯৯৭ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘের মহাসচিব হিসেবে ছিলেন কফি আনান।

২০০৬ সালে মহাসচিবের দায়িত্ব ছাড়ার পর সিরিয়া সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজতে জাতিসংঘের বিশেষ দূত হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

২০০৭ সালে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা বৈশ্বিক নেতাদের গ্রুপ দ্য এলডারস’র প্রতিষ্ঠা হলে এর সদস্য হন কফি আনান। ২০১৩ সালে ওই গ্রুপের চেয়ারম্যান হন তিনি।

এছাড়া রাখাইনে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমার সরকার গঠিত কমিশনের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। আনান কমিশন নামে পরিচিতি পাওয়া ওই কমিশন রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ৮৮টি সুপারিশ করে। গত বছরের আগস্টে রাখাইনে সেনা অভিযানের পর বাংলাদেশে পালিয়ে আসা সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গার নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনে আনান কমিশনের সেসব সুপারিশ বাস্তবায়নের ওপর জোর দিচ্ছে বাংলাদেশ।

আজ শনিবার সুইজারল্যান্ডের বার্ন শহরের একটি হাসপাতালে কফি আনানের মৃত্যু বরণ করেন। মৃত্যকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।  মৃত্যুকালে তার স্ত্রী ও তিন সন্তান উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত পোস্ট
Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com