ঢাকাশুক্রবার , ১৩ জুলাই ২০১৮
আজকের সর্বশেষ সবখবর

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অনিবন্ধিত হাজারো রোহিঙ্গা!

প্রতিবেদক
সিএনএ

জুলাই ১৩, ২০১৮ ৬:২১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

তারেক সাঈদ ইমন: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে থেকে পালিয়ে কক্সবাজারের টেকনাফে আশ্রয় নেয়া হাজারো রোহিঙ্গা এখনও অনিবন্ধিত রয়েছেন। সরেজমিনে টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ঘুরে কর্মরত কর্মকর্তা ও রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
জানাগেছে, টেকনাফের তিনটি রোহিঙ্গা শিবিরে হাজারো নতুন-পুরোনো রোহিঙ্গা এখনও নিবন্ধিত হননি। এর মধ্যে লেদা রোহিঙ্গা শিবিরে তিন শতাধিক ও নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শিবিরের এক হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা অনিবন্ধিত রয়েছেন। তবে ঠিক কত রোহিঙ্গা এখনও নিবন্ধিত হয়নি সে বিষয়ে কোনও সংস্থা সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারেনি।
এদিকে ১১ জুলাই জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে কোনও অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা নেই। সবাইকে নিবন্ধিত করা হয়েছে।’ তবে বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন দেখা গেছে।
এ বিষয়ে টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শিবিরের চেয়ারম্যান আলী জোহার বলেন, ‘আমার দায়িত্বে ১৯ হাজার পরিবারের ৮৫ হাজার রোহিঙ্গা আছেন। এরা সবাই গত বছর আগস্টের পরে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছেন। এর মধ্যে এক হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা এখনও নিবন্ধিত হননি। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
৭ মাস আগে রাখাইন রাজ্যের বুশিডং টাউনশিপ গ্রাম থেকে পালিয়ে এসে টেকনাফের লেদা শিবিরে এক আত্মীয়ের ঝুপড়ি ছাউনিতে আশ্রয় নেন আরফাত মাউছন (২৫) নামে এক রোহিঙ্গা যুবক। যার ছদ্ম নাম মম চৌ। অনেকের মতো এখনও নিবন্ধিত হতে পারেননি এই রোহিঙ্গা। গতকাল দুপুরে লেদা শিবিরে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রাণে বাঁচতে পালিয়ে এসেছি সাত মাস পেরিয়ে গেছে। তবে এখনও কোনও কার্ড (নিবন্ধিত) পাইনি। আমার সঙ্গে আসা অনেকই কার্ড পেয়েছেন, আবার অনেকে পাননি। নিবন্ধনের কার্ড না পাওয়ায় আমি কোন ত্রাণের কার্ডও পাইনি। এপারে আসার পর থেকে কষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে।
ওই ক্যাম্পের পাশে দাঁড়িয়ে একজন অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা গত আট মাস ধরে রোহিঙ্গা শিবিরে বসবাস করছেন মো. ইয়াছিন (৩৫)। এই রোহিঙ্গা বলেন, ‘স্বজনদের হারিয়ে এপারে পালিয়ে এসেছি আট মাস হয়ে গেল। স্বজনদের কথা মনে করে এখনও কাঁদি। মিয়ানমার সেনারা সেখানে গণহত্যা করেছে। আমাদের সহায়-সম্বল লুট করে নিয়েছে। নিঃস্ব হয়ে এপারে এসেছি। রোহিঙ্গা হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের তালিকায় এখন নিবন্ধিত হতে পারেনি। এজন্য কোন ত্রাণের কার্ডও পাইনি। ফলে কষ্টে দিন পার করছি।
প্রায় দেড় যুগ ধরে বাংলাদেশে অবস্থান নেয়া রোহিঙ্গা দুদু মিয়া (৪৭) ও মো. আইয়ুব (৪৮) বলেন, ‘গত ১৬ বছর আগে রাখাইনে সেনা সদস্য ও মগদের নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। তখন থেকে টেকনাফ রোহিঙ্গা শিবিরে রয়েছে। তারা বলেন, আমাদের নাম কেউ লিখে নেননি, ছবিও তোলেননি। সরকারি-বেসরকারি কোনও তালিকায় আমরা স্থান পাইনি। নতুন-পুরনো লাখ লাখ রোহিঙ্গা নিবন্ধিত হয়েছেন। আমরা হতে পারিনি। এখন আমাদের কী হবে?’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা শিবিরের চেয়ারম্যান আবদুল মতলব বলেন, ‘এই শিবিরের তিন শতাধিক রোহিঙ্গা অনিবন্ধিত রয়েছেন। এর মধ্যে নতুন ও পুরনো অনেকেই আছেন। তাদের একটি তালিকা ক্যাম্প ইনচার্জকে দেয়া হয়েছে।
টেকনাফ লেদা রোহিঙ্গা শিবিরের সহকারি ইনচার্জ শাহাজান মিয়া বলেন, ‘এই রোহিঙ্গা শিবিরের নিবন্ধিত হয়নি এমন একটি তালিকা পেয়েছি। তবে এই তালিকা আমার কাছে সন্দেহ প্রবণ মনে হয়েছে। বিয়টি যাচাই-বাচাই করা হচ্ছে। যদি কোনও রোহিঙ্গা অনবন্ধিত হয়ে থাকেন তাদের নিবন্ধনের আওতায় আনা হবে।
বাংলাদেশের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, ‘কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া কিছু রোহিঙ্গা অনিবন্ধিত রয়েছেন, ‘এমন খবর আমরা পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সব রোহিঙ্গাকে নিবন্ধের আওতায় আনা হবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের মধ্যে ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫৭৬ জনকে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধিত করা হয়েছে।

সম্পর্কিত পোস্ট
Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com